বাংলাদেশের ডিজিটাল ব্যাবসা খাত

বাংলাদেশের ডিজিটাল ব্যবসা গুলোর সাফল্যের সম্ভাবনা প্রচুর। অনেক সম্ভাবনাময় উদ্যোগ পাচ্ছে সফলতা, আবার অনেক উদ্যোগ মুখ থুবড়ে পড়ছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ব্যবসায়ীরা বাংলাদেশের ডিজিটাল খাতসমূহ অর্থ বিনিয়োগ করছে। বর্তমানে ডিজিটাল ব্যবসার খাতসমূহ একটি অনন্য কৌশল, যার মাধ্যমে এক স্থান থেকে সারা বিশ্বে ব্যবসা করা যায়। ইন্টারনেট ব্যবহার করে ব্যবসা পরিচালনা করাকে ডিজিটাল ব্যবসায় বলে। ডিজিটাল ব্যবসা শুরু করার আগে এই বিষয়ে একটা বিস্তারিত জ্ঞান থাকা জরুরী। সর্বপ্রথম একটি লাভজনক আইডিয়া খুঁজে বের করতে হবে। এই আর্টিকেলটিতে আমরা বাংলাদেশের কিছু জনপ্রিয় ডিজিটাল ব্যবসা খাত নিয়ে আলোচনা করব:

  • কমার্স প্ল্যাটফর্ম:- অনলাইন ই কমার্স মার্কেটপ্লেস গুলো যেমন:ইভ্যালি,প্রিয়শপ.কম,অথবা.কম,চালডাল.কম,আমাজন,আলিবাবা,অনলাইনে বিভিন্ন পণ্য ক্রয় এবং বিক্রয় করে ব্যবসা করতে সক্ষম। এই প্লাটফর্ম গুলো দ্রুত ডেলিভারি, অবিশ্বাস্য ডিসকাউন্ট, এবং মানসম্মত পণ্য ক্রেতার হাতে তুলে দেয় বলে খুবই জনপ্রিয়। ইন্টারনেটের প্রচুর ব্যবহারের কারণে ই-কমার্স প্ল্যাটফর্ম গুলোর ব্যবসা পরিসর বৃদ্ধি পেয়েছে। অনলাইনে পণ্যের অর্ডার নিয়ে সেগুলো ক্রেতার কাছে পৌঁছে দেওয়ার মাধ্যমে এই ব্যবসা পরিচালনা করা সম্ভব।
  • অনলাইন স্ট্রিমিং পরিসেবা: নেটফ্লিক্স , আমাজন প্রাইম, Bongo লাইভ টিভি, টফি লাইভ টিভি ইত্যাদি প্ল্যাটফর্মগুলি সিনেমা, টিভি টেলিকাস্ট অফার করে থাকে। পরিষেবাগুলি বিনোদন শিল্পতে ঝড় তুলেছে।উচ্চ-গতির ইন্টারনেটের আবির্ভাব এবং স্মার্টফোন এবং স্মার্ট টিভির ব্যাপক প্রসারতার ফলে, এখন বাংলাদেশী তরুন থেকে শুরু করে সব বয়সের মানুষই অনলাইনে স্টিমিং পরিষেবা প্রদানের মাধ্যমে অর্থ রোজগার করছে।বাংলাদেশের ডিজিটাল ব্যবসা গুলোর মধ্যে এটি একটি বৃহৎ অংশ দখল করে আছে।কিন্তু এই ‌পরিষেবাগুলি ঐতিহ্যগত বিনোদন শিল্পকে ব্যাহত করেছে।
  • রাইডশেয়ারিং পরিসবা: 

বাংলাদেশের রাইডিং শেয়ারিং পরিসেবা‌ গুলোর মধ্যে উবার এবং পাঠাও এর মতো ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মগুলো যাত্রীদের সুবিধাজনক পরিবহনের জন্য ড্রাইভারের সাথে সংযুক্ত করে। মূলত অনলাইন থেকেই যাত্রী নির্বাচন করা যায়। এবং যাত্রীকে তার পছন্দের স্থানে পৌঁছে দিয়ে অর্থ রোজগার করা সম্ভব।এই রাইড শেয়ারিং পরিষেবা গুলো বাংলাদেশের তিনটি বড় শহর ঢাকা,চট্টগ্রাম এবং সিলেটে তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে। কর্মব্যস্ত শহরে যারা নিজেদের চলাচল ব্যবস্থা নিয়ে শঙ্কিত থাকেন রাইড শেয়ারিং পরিষেবা হতে পারে তাদের জন্য একটি উৎকৃষ্ট পরিষেবা।

  • ফুড ডেলিভারি পরিসেবা: 

ফুডপান্ডা, হাংরি নাকি, পাঠাও ফুড ডেলিভারি, সহজ ফুড ডেলিভারি অ্যাপ, কুক আপ ফুড ডেলিভারি অ্যাপ‌,এর মতো অ্যাপগুলি ব্যবহারকারীদের স্থানীয় রেস্তোরাঁ থেকে খাবার অর্ডার করে দেয় এবং তা তাদের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেয়। অনলাইনে খাবারের অর্ডার নিয়ে বিভিন্ন রেস্তোরার মাধ্যমে মানুষের দোরগোড়ায় খাবার পৌঁছে দেওয়া হয় এই ফুড ডেলিভারি পরিষেবার মাধ্যমে। অ্যাপভিত্তিক ফুড ডেলিভারি অনলাইন পরিষেবা গুলো রাজধানী বাসীদের জন্য  খাবারের সার্ভিস প্রদান করে থাকে। ফুড ডেলিভারি পরিষেবা একটি ডিজিটাল ব্যবসায়‌ খাত।                 

  • অনলাইন ট্রাভেল এজেন্সি:

বাংলাদেশের‌ কিছু ট্রাভেল এজেন্সির নাম হলো ড্রাগন হলিডেজ বিডি, আরনিম হলিডেস, অবকাশ ট্রাভেলস। ট্রাভেল এজেন্সি গুলো বেসরকারি প্রতিষ্ঠান অথবা সরকার দ্বারা পরিচালিত পরিষেবা ও হতে পারে। সাধারণ জনগণের কাছে এটা ভ্রমণ এবং পর্যটন সম্পর্কিত পরিষেবা। ট্রাভেল প্রোভাইডারদের পক্ষ থেকে ট্রাভেল এজেন্সির মাধ্যমে এই পরিষেবা প্রদান করা হয়। যেহেতু এই প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে অনলাইন থেকে অর্থ উপার্জন করা সম্ভব তাই এটি ডিজিটাল ব্যবসায় খাত।

  • অনলাইন লার্নিং প্ল্যাটফর্ম: 

বাংলাদেশের কিছু জনপ্রিয় অনলাইন লার্নিং প্ল্যাটফর্ম রয়েছে। যেমন: 10 minute School, Shikho, Learning Bangladesh, Shikkok‌ Batayan, MBs Academy ইত্যাদি। এই প্ল্যাটফর্মগুলি একাডেমিক বিষয় থেকে শুরু করে দক্ষতা-ভিত্তিক কোর্স শেখায় শিক্ষার্থীদের। যেহেতু ঘরে বসে মোবাইল ফোন অথবা কম্পিউটারের সাহায্যে অনলাইনে শিক্ষার্থীদের শিখিয়ে অর্থ রোজগার করা সম্ভব তাই এটি একটি ডিজিটাল ব্যবসা।

  • ডিজিটাল ব্যাঙ্কিং এবং পেমেন্ট পরিসেবা:

বাংলাদেশের সব থেকে বড় ডিজিটাল ব্যাংকিং এবং পেমেন্ট পরিষেবা প্রদান করে বিকাশ এবং রকেট কোম্পানি। টাকা স্থানান্তর এবং বিভিন্ন বিল পরিশোধ করা যায় ডিজিটাল ব্যাংকিং এর মাধ্যমে নিমিষেই। যেহেতু ঘরে বসে যাবতীয় ব্যাংকিং লেনদেন নিরাপদে সম্পাদন করা যায় ডিজিটাল ব্যাংকিং সেবার মাধ্যমে তাই বর্তমানে এটি একটি জনপ্রিয় ডিজিটাল ব্যবসায়ের খাত।

  • ডিজিটাল মার্কেটিং এজেন্সি: 

ডিজিটাল মার্কেটিং কৌশল, সার্চ ইঞ্জিন অপ্টিমাইজেশান (SEO), সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং এবং অনলাইন বিজ্ঞাপনে বিশেষজ্ঞ কোম্পানিগুলি ডিজিটাল স্পেসে তাদের পণ্য এবং পরিষেবাগুলিকে প্রচার করতে সাহায্য করে৷ বাংলাদেশে এখন সব থেকে বড় মার্কেটিং প্লাটফর্ম হল ডিজিটাল মার্কেটিং এজেন্সি। বাংলাদেশ সরকার প্রতিবছর ডিজিটাল মার্কেটিং এজেন্সির পিছনে ২ হাজার কোটি টাকা ব্যয় করে থাকে। বর্তমানে এটি সবথেকে জনপ্রিয় ডিজিটাল ব্যবসায় খাত।

  • ডিজিটাল স্বাস্থ্য সেবা প্রদানকারী:

বাংলাদেশের সব থেকে বড় ডিজিটাল স্বাস্থ্যসেবা বা টেলিমেডিসিন সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান হল স্বাস্থ্য বাতায়ন এবং মিলভিক। ভিডিও কল এবং অনলাইন যোগাযোগের মাধ্যমে দূরবর্তী চিকিৎসা পরামর্শ এবং স্বাস্থ্যসেবা পরিষেবা প্রদান করে।যেহেতু অনলাইনের মাধ্যমে চিকিৎসা সেবা প্রদান করা সম্ভব এবং রোগীরা ঘরে বসেই উপকৃত হচ্ছে তাই এটি নিঃসন্দেহে একটি ডিজিটাল ব্যবসা।

  • সফটওয়্যার এজ সার্ভিস প্রদানকারী:

Microsoft, এবং Adobe-এর মতো কোম্পানিগুলি গ্রাহক সম্পর্ক ব্যবস্থাপনা,   উৎপাদনশীলতা এবং সৃজনশীল উদ্দেশ্যে ক্লাউড- ভিত্তিক সফ্টওয়্যার সেবা প্রদান করে। সাধারণ উদাহরণ হল:Gmail, Amazon Web Services,  Slack এগুলোর নিয়ম হলো যতটুকু সেবা প্রদান করা হবে তার ভিত্তিতেই অর্থ প্রদান করা হবে। এগুলো বিক্রেতা দ্বারা রক্ষণাবেক্ষণ এবং সুরক্ষিত থাকে। সফটওয়্যার এজ এ সার্ভিস বর্তমানে একটি সম্ভাবনাময় অনলাইন ডিজিটাল ব্যবসা । যার মাধ্যমে লক্ষ লক্ষ মানুষ নিমিষেই উপকৃত হচ্ছে।

ডিজিটাল ব্যবসায়িক খাতগুলো বর্তমানে দ্রুত গতিতে জনপ্রিয়তা পাচ্ছে। এর মূল কারণ হলো সহজেই একটি প্রতিষ্ঠান অন্য প্রতিষ্ঠানের সাথে অথবা একজন ব্যক্তি অন্য ব্যক্তির সাথে কানেক্টেড হতে পারে ইন্টারনেটের মাধ্যমে। এবং এইসব ব্যবসার মাধ্যমে সহজেই লাভবান হওয়া সম্ভব।

শেষ কথা

তথ্য প্রযুক্তির সাথে তাল মিলিয়ে বর্তমানে দ্রুত গতিতে বৃদ্ধি পাচ্ছে ডিজিটাল ব্যবসা খাত গুলো। কিন্তু অনেকেই জানেন না ডিজিটাল ব্যবসার খাদ গুলো কি কি। আশা করি আজকের আর্টিকেলের মাধ্যমে আপনারা সবাই ডিজিটাল ব্যবসার খাদগুলো সম্পর্কে জানতে পারলেন। ডিজিটাল ব্যবসা গুলোর মাধ্যমে ঘরে বসেই অনলাইনে অর্থ ইনকাম করা সম্ভব। তাই বর্তমানে অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *