ডিজিটাল কমার্স রেভিনিউ মডেলসমূহ

ই-কমার্স পণ্য ও সেবার দিক থেকে যেমন বহুমাত্রিক তেমনি পরিচালনার দিক থেকেও এখানে বিভিন্ন কাঠামো রয়েছে। শুধু পরিচালনা নয় ব্যবসার সব পর্বে এখানে একাধিক পদ্ধতি রয়েছে। যেমন বেশ কয়েক ধরনের পেমেন্ট সুযোগ রয়েছে রয়েছে একাধিক ধরনের পণ্য ডেলিভারী সুবিধাও। টোটাল বিজনেস অপারেশন বা লাভ করার কৌশল কিংবা আয় পদ্ধতির উপর ভিত্তি করে ই-কমার্সের রেভিনিউ মডেলগুলো এখানে তুলে ধরা হয়েছে। 

১.ট্রানজেকশন রেভিনিউ মডেল

ট্রানজেকশন রেভিনিউ মডেল এর মাধ্যমে যেকোনো ধরনের পণ্য ক্রয়-বিক্রয়, লেনদেন এবং অর্থপ্রদান করা যায়। বিভিন্ন ধরনের লেনদেন করার জন্য এটি একটি  প্রচলিত পদ্ধতি। যার সহজ কথা হলো প্রচলিত লেনদেন পদ্ধতির ডিজিটালিাইজেশন করা হয়েছে ই-কমার্সে। এই রেভিনিউ মডেলের মাধ্যমে কোম্পানিগুলি তাদের লেনদেন সম্পাদন করার জন্য জন্য বিক্রেতাদের অর্থ চার্জ করে থাকে।  ট্রানজেকশন রেভিনিউ মডেলের মাধ্যমে গ্রাহকরা বিভিন্ন পণ্য বা পরিষেবার জন্য অর্থ প্রদান করে থাকে। এতে ই-কমার্স প্লাটফর্মে বিক্রেতা ক্রেতার কাছ থেকে পণ্য ক্রয় করে। এই লেনদেন বা ক্রয় বিক্রয়ের উপর ভিত্তি করে প্লাটফর্ম কতৃপক্ষ তাদের আয়. অংশ বা লাভ নির্ধারণ করে থাকে।  বাংলাদেশের অনলাইন শপগুলো এভাবে কাজ করে। যেমন চালডাল।

২.সেলস রেভিনিউ মডেল

সেলস রেভিনিউ মডেল হল আরেকটি ই-কমার্স ব্যবসায়িক মডেল যেখানে পাইকারি বিক্রেতা এবং খুচরা বিক্রেতারা তাদের পণ্য অনলাইন প্লাটফর্মে বিক্রি করে থাকে। এই ধরনের  রেভিনিউ মডেল  বা আয় কাঠামো এর মাধ্যমে খুচরা বিক্রেতারা তাদের পণ্যগুলো সরাসরি বাজারের দামেই অনলাইনে বিক্রি করতে পারবেন। পণ্যগুলো বিভিন্ন ওয়েবসাইটে প্রতিযোগিতা মূলক ভাবে বিক্রি হয়ে থাকে । আর এখানে প্লাটফর্ম কতৃপক্ষ ক্রয় ও বিক্রয়ের একটি ব্যবধানের মাধ্যমে তাদের লাভ বা ব্যবসা করে থাকে কখনো কখনো এটা নির্দিষ্ট অংক, কখনো শতাংশ হিসেবে এই লাভের অংশ ঠিক করা হয়। বিশেষ করে মার্কেটপ্লেসগুলো এভাবে চলে। যেমন দারাজ। 

৩.অ্যাফিলিয়েট রেভিনিউ মডেল

অ্যাফিলিয়েট রেভিনিউ মডেলটি প্রধানত কমিশন এর মাধ্যমে অর্থ প্রদানের উপর ভিত্তি করে পরিচালিত হয়। এই মডেলে মার্কেটপ্লেস অথবা অনলাইন শপ তৃতীয় কোনো ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান, ব্লগার কিংবা ইনফ্লুয়েন্সার নিয়োগ করে থাকে অথবা সিস্টেমে অ্যাফিলিয়েটেড ফ্রেমওয়ার্ক থাকে তাতে যেকেউ যুক্ত হয়ে ই-কমার্সের পণ্যের মার্কেটিং করতে পারে। সেটা নিজের ওয়েবসাইট, পেইজ, প্রোফাইল, ব্লগ, একাউন্ট, কনটেন্ট, ই-মেইল কিংবা অন্যকোনো পদ্ধতিতে হতে পারে। তবে সাধারণত এই পদ্ধতিগুলো ডিজিটাল হয়ে থাকে।  এখানে মূলত কমিশনের বিনিময়ে বা রেভিনিউ কিংবা লাভের বিনিময়ে অ্যাফিলিয়েটেড মার্কেটারের তৃতীয় কোনো পক্ষের পণ্য সেবা বিপনন ও বিক্রয় করে থাকে। বিশেষ ক্রস বর্ডার ই-কমার্সে এটি বেশ জনপ্রিয়। অ্যামাজনের সাথে লক্ষ তরুনেরা অ্যাফিলিয়েশন করে ক্যারিয়ার গঠন করছে বলে জানা যায়। এটা বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত ও জনপ্রিয় একটি ই-কমার্স রেভিনিউ মডেল। 

৪.এজেন্সি রেভিনিউ মডেল

এটাও প্রচলিত ব্যবসা পদ্ধতির ডিজিটাল রুপান্তর। প্রচলিত ব্যবসায় যেমন মূল কোম্পানী তৃতীয় ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে এজেন্সি নিয়োগ করে পণ্য সেবা বিপনন ও বাজারজানকরণ এমনকি সরবরাহ করে থাকে। এক্ষেত্রে তাই।  বাংলাদেশে ই-কমার্সের পূর্নাঙ্গ এজেন্সি রেভিনিউ মডেল দেখা যায়না। তবে এখানে বিভিন্ন ক্ষেত্রে আংশিক এজেন্সি রেভিনিউ মডেল দেখা যায়। 

যেমন, একটি ফুড ডেলিভারী সেবা প্লাটফর্ম রেস্টুরেন্টগুলোকে তালিকাভূক্ত করার জন্য এজেন্সি নিয়োগ করে থাকে। এটা যদিও ব্যবসার প্রস্তুতির অংশ কিন্তু বাংলাদেশে বেশীরভাগ ই-কমার্ষ প্রতিষ্ঠান পণ্য ডেলিভারীর ক্ষেত্রে এজেন্সির সেবা নিয়ে থাকে। এখানে যেহেতু ক্যাশ অন ডেলিভারী বা সিওডি মডেলে পণ্য ডেলিভারী হয়। লজিস্টিক কোম্পানীগুলো মার্চেন্ট এর মাঠ-অর্থ সংগ্রহ করে তার উপর একটি কমিশন ধার্য করে এবং এক্ষেত্রে এটা কুরিয়ার কোম্পানীরও রেভিনিউ মডেল। বর্তমানে শিপিং এজেন্ট হিসেবে তারা পার্সেল ডেলিভারী চার্জ ছাড়াও সিওডি েএর জন্য ১% হারে চার্জ ধার্য করে থাকে। 

৫.অ্যাডভার্টাইজিং রেভিনিউ মডেল

অ্যাডভার্টাইজিং রেভিনিউ মডেল হলো বিভিন্ন বিজ্ঞাপন দাতাদের একটি অনলাইন পণ্য ক্রয় বিক্রয় প্ল্যাটফর্ম। বিজ্ঞাপন দেওয়ার জন্য একটি কমিশন ধার্য করা হয়। এটির জনপ্রিয়তা অনেক। এগুলো বিভিন্ন ওয়েবসাইট পরিদর্শন করে এবং যেখানে বিজ্ঞাপনগুলি অনুমোদিত হয় অথবা বিভিন্ন কোম্পানী দ্বারা সমর্থিত হয়। এটির মাধ্যমে অনলাইনে বিজ্ঞাপন প্রদর্শিত হয়। এটাকে ডিজিটাল কমার্স বলা গেলেও প্রচলিত ই-কমার্স নয়। তবে অনলাইনে মূল্যপ্রদান করে সেবা গ্রহণ করা হয় বিধায় এটাও ই-কমার্স ইন্ডাস্ট্রির একটি ব্যবসা। বাংলাদেশে আমরা বিক্রয় ডট কমকে এই মডেলে ব্যবসা করতে দেখি। 

৬.সাবস্ক্রিপশন রেভিনিউ মডেল

সাবস্ক্রিপশন রেভিনিউ মডেল নিয়মিত আয়ের জন্য ব্যবহার করা হয়। নিয়মিত পেমেন্ট প্রক্রিয়াকরণের জন্য গ্রাহকদের কাছে অর্থ চার্জ করে থাকে। এই রেভিনিউ মডেল এর মাধ্যমে আপনি আপনার ক্লায়েন্টদের সাথে দীর্ঘমেয়াদী সম্পর্ক স্থাপন করতে পারেন। এবং পণ্য বা পরিষেবা ব্যবহার না করলেও অর্থ প্রদান চালিয়ে যাওয়া সম্ভব। বিশেষ করে সেবার ক্ষেত্রে এই মডেল বেশী কাজ করে। ভার্চুয়াল পণ্যসেবার ক্ষেত্রে পণ্যবিশেষে এর চলন রয়েছে। 

অন্যান্য

বাংলাদেশে কিছু প্রতিষ্ঠান বিতর্কিত রেভিনিউ মডেলে ব্যবসা পরিচালনার মাধ্যমে লক্ষ লক্ষ গ্রাহককে যেমন বিপদে ফেলেছে তেমনি পথে বসিয়েছে অনেক উদ্যোক্তাকে। এরা ব্রান্ডিং ও সেল বাড়ানোর নামে কম দামে পণ্য বিক্রি করে পন্যের সরবরাহকারীকে টাকা না দিয়ে সে টাকা নিজেরাই আত্মসাৎ করেছে। এ ধরনের মডেলকে ঝুকিপূর্ণ বিজনেস মডেল ও প্রতারনাপূর্ণ বিজনেস মডেল ইত্যাদি নামে অবহিত করলেও প্রকৃত পক্ষে এটা কোনো বিজনেস মডেল নয়। যেখানে ব্যবসা হয়না সেটা ব্যবসা মডেল হতে পারে না। 

বর্তমানে কনটেন্ট রিলেটেড প্লাটফর্ম যেমন চরকি, নেটফ্লিক্স এই মডেলে ব্যবসা করে থাকে। রকমারি ডট কম এর মুঠোবই নামে ডিজিটাল বই পড়ার একটি সেবা রয়েছে। যেখানে আপনি চাইলে মাসিক ফি এর বিনিময়ে প্রায় ১ লাখেরও বেশী বই পড়ার সুযোগ পাবেন। 

বাংলাদেশে সাধারণত পেমেন্ট পদ্ধতির উপর ভিত্তি করে ই-কমার্স রেভিনিউ মডেলকে পরিচিত করানো হয়। যেমন ক) অনলাইন পেমেন্ট খ) সিওডি (ক্যাশ অন ডেলিভারী) গ) এমএফএস ( মোবাইল ব্যাংকিং) ঘ) পিকএন্ডডে ইত্যাদি। তবে সময়ের সাথে সাথে পৃথিবী বদলে যাচ্ছে। এবং সব কিছুর উন্নত ও নতুন নতুন মডেল বাজারে আসছে। ডিজিটালাইজেশন ও ইনোভেশনের মাধ্যমে এত দ্রুত নতুন আইডিয়া ও প্রযুক্তি আসছে যে পুরনো প্রযুক্তি অনেক ভোক্তা ব্যবহার করার আগেই তা বাজার থেকে হারিয়ে যাচ্ছে। 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *